Vitamins

হলুদ দুধ স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারী ? উপকরণ,বানানোর নিয়ম

দুধের সঙ্গে হলুদ মিশিয়ে খেলে কী হয় ? হলুদের জনপ্রিয়তা সেই প্রাচীন কাল থেকেই। সুস্বাস্থ্য থেকে রূপচর্চা কোথায় নেই হলুদের ব্যবহার? অন্যদিকে দুধের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতাও কম নয়।

কিন্তু জানেন কি, ঔষধি গুণাগুণসম্পন্ন হলুদ দুধের সঙ্গে মেশালে এর গুণাগুণ বেড়ে যায় অনেক বেশি। প্রাচীনকাল থেকেই হলুদমিশ্রিত দুধ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

হলুদ দুধ, হলদি দুধ বা “গোল্ডেন মিল্ক” ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষ বহু বছর ধরে পান করে আসছে। কিন্তু এখন হলুদ দুধ পশ্চিমা বিশ্বেও দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এবং এটার পেছনে একটাই কারণ তা হচ্ছে এর অসংখ্য স্বাস্থ্য উপকারিতা।

কাঁচা হলুদ দিয়ে দুধ খাওয়ার উপকারিতা

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে

হলুদ দুধ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তুলতে দুর্দান্ত সহায়ক। এর অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ভাইরাল এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য শরীরকে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। সর্দি-কাশি ও ফ্লু থেকে বাঁচতে অনেক ডাক্তার প্রতিদিন এক গ্লাস গরম দুধে এক চা চামচ হলুদ মেশানোর পরামর্শ দেন।

মস্তিষ্কের কার্যকরিতা উন্নত করে

হলুধ দুধ মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্যেও অনেক উপকারি। এতে থাকা কারকিউমিন মস্তিষ্ক থেকে প্রাপ্ত নিউরোট্রফিক ফ্যাক্টর (বিডিএনএফ) এর মাত্রা বাড়াতে পারে। আর এ কারণে এটি আপনার মস্তিষ্ককে নতুন সংযোগ তৈরি করতে সাহায্য করে এবং মস্তিষ্কের কোষের বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে।

হৃদরোগে উপকারী

সারা বিশ্বেই এখন অন্যতম একটি মৃত্যুর কারণ হয়ে উঠেছে হৃদরোগ। আর হলুদ দুধ আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করতে পারে। এতে হলুদ মেশানোর কারণে তাতে থাকা কারকিউমিন আপনার রক্তনালীর আস্তরণের কার্যকারিতা উন্নত করতে পারে যা এন্ডোথেলিয়াল ফাংশন হিসাবেও পরিচিত। আর সঠিক এন্ডোথেলিয়াল ফাংশন হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।

রক্তনালী পরিশোধক হিসেবে কাজ করে

হলুদ দুধ রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করতে অত্যন্ত সহায়ক। এটি লিম্ফ্যাটিক সিস্টেম এবং রক্তনালী পরিষ্কার করে। তাই, হলুদ দুধ রক্ত পরিশোধক হিসেবেও কাজ করে।

কোষের ক্ষতির বিরুদ্ধে লড়াই করে

হলুদ দুধ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ একটি পানীয়। হলুদে কারকিউমিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বর্তমান। তাছাড়া দুধও শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মাত্রা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। এটি কোষের যে কোনো ধরনের ক্ষতির বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং শরীরকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করতেও সহায়তা করে। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বিভিন্ন রোগ ও সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতেও সহায়তা করে।

হজমের সমস্যা দূর করে

হলুদ দুধে আন্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য বর্তমান, যা বিভিন্ন ধরনের হজমের সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে। গ্যাস, পেট ফুলে যাওয়া, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ইনফেকশন, ডায়রিয়া এবং পেটের আলসারের মতো বিভিন্ন সমস্যা প্রতিরোধ করতে হলুদ দুধ অত্যন্ত কার্যকরী।

ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে

গবেষণায় দেখা গেছে, হলুদে থাকা কারকিউমিন ক্যান্সার কোষকে ধ্বংস করে, ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে। হলুদ দুধ ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায়ে প্রতিদিন পান করলে, এটি ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি বন্ধ করতেও সহায়তা করে।

ব্যথা কমাতে দুর্দান্ত কার্যকর

হলুদে রয়েছে কারকিউমিন। গবেষণায় দেখা গেছে যে, কারকিউমিন প্রদাহ কমাতে অত্যন্ত কার্যকর। হলুদ দুধ ফোলাভাব কিংবা ব্যথা কমাতে দুর্দান্ত কার্যকর।

হাড়ের ক্ষয় রোধ করে

হলুদে থাকা কারকিউমিন ব্যথা কমাতে, জয়েন্টের কার্যকারিতা উন্নত করতে, অত্যন্ত কার্যকর। এটি হাড়ের টিস্যুগুলোকে রক্ষা করে এবং হাড়ের ক্ষয় রোধ করে। তাছাড়া, দুধ ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, প্রোটিন, ভিটামিন-কে এবং ভিটামিন-ডি এর দুর্দান্ত উৎস, যা হাড়কে শক্তিশালী করে তোলে এবং সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। তাই হলুদ দুধ পান করলে ফ্র্যাকচার এবং অস্টিওপরোসিসের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।

প্রজনন ক্ষমতা উন্নত করে

হলুদের দুধে অ্যান্টি-স্প্যাসমোডিক বৈশিষ্ট্যও বর্তমান, যা মাসিক চক্রের সময় হওয়া ব্যথা দূর করতে সহায়তা করে। এটি মাসিক চক্রকে স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রেও অত্যন্ত সহায়ক। নারীদের হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, এন্ডোমেট্রিওসিস, লিউকোরিয়া অথবা ফাইব্রয়েডের সমস্যা দূর করতে এবং প্রজনন স্বাস্থ্যকে উন্নত করতে, হলুদ দুধ দুর্দান্ত কার্যকর।

মেজাজ ভালো রাখে

হলুদ দুধ মস্তিষ্কের উন্নতি করে মেজাজ ভালো রাখতেও অনেক উপকারী। এতে থাকা কারকিউমিন নিউরোট্রফিক ফ্যাক্টর (বিডিএনএফ) এর মাত্রা বাড়াতে পারে বলে তা বিষন্নতার লক্ষণ হ্রাস করে বলে মিলেছে গবেষণায়।

হলুদ দুধ অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে পরিপূর্ণ

হলুধ দুধে কারকিউমিন থাকে যেটি হলুদে থাকা একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান। আর এটির কারণে তা আপনার কোষের ক্ষতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে ও শরীরকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে। এ ছাড়া অ্যান্টিঅক্সিডেন্টপূর্ণ খাবারগুলো আপনার সংক্রমণ ও রোগের ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করে।

 

হলুদ দুধের অপকারিতা

রক্ত পাতলা রাখে বলে গর্ভাবস্থায় খুব বেশি না খাওয়াই ভাল। যাঁদের কিডনিতে পাথর হওয়ার প্রবণতা আছে, তাঁরাও খাবেন রয়েসয়ে। কারণ হলুদে ২ শতাংশ অক্সালেট আছে, যার প্রভাবে কারও কারও কিডনিতে পাথর হতে পারে।

হলুদ দুধ বানানোর নিয়ম

প্রয়োজনীয় উপকরণঃ

  • কাঁচা হলুদ : এক ইঞ্চি (টুকরা করা)
  • তরল দুধ: ২২০ মিলি
  • চিনি অথবা মধু : স্বাদমতো
  • গোলমরিচ গুঁড়া: এক চিমটি

প্রস্তুত প্রণালীঃ

প্রথমে একটি পাত্রে হলুদ কুঁচি ও দুধ একসঙ্গে ফুটিয়ে নিন। চুলা থেকে নামিয়ে ঢেকে রাখুন কিছুক্ষণ। গরম থাকতে থাকতেই ছেঁকে মধু অথবা চিনি মিশিয়ে নেবেন। গোলমরিচ গুঁড়া ছিটিয়ে পরিবেশন করুন হলুদ দুধ। চাইলে কাঁচা হলুদের বদলে হলুদ গুঁড়া মিশিয়েও বানাতে পারেন হলুদমিশ্রিত দুধ।

রূপচর্চায় দুধ ও কাঁচা হলুদের ব্যবহার

প্রাচীনকাল থেকেই হলুদ রূপচর্চায় ব্যবহৃত হচ্ছে। রান্নার পাশাপাশী রূপচর্চায়ও এর ভূমিকা অনেক। হলুদ ও দুধের মিশ্রণ ত্বকের ক্ষতি করে এমন উপাদানের বিরুদ্ধে কাজ করে ত্বককে সুস্থ রাখে। কাঁচাদুধের সঙ্গে হলুদের গুঁড়া মিশিয়ে মুখ ও গলায় লাগাতে হবে। শুকিয়ে আসলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

হলুদ ও মধু: ত্বকের ভেতরের আর্দ্রতা রক্ষা করে উজ্জ্বল ত্বক ফুটিয়ে তুলতে হলুদ ও মধুর মিশ্রণ সাহায্য করে। মধুতে আছে প্রাকৃতিক ভাবে ত্বক আর্দ্র রাখার ক্ষমতা যা ত্বক উজ্জ্বল করে। মধু ও হলুদের তৈরি প্যাক ত্বক স্বাভাবিকভাবে চকচকে ও সুন্দর করে তোলে।

হলুদ ও নারিকেল তেল: হলুদ ও নারিকেল তেলে আছে অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান। তাছাড়া নারিকেলের তেল খুব ভালো ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। খাঁটি নারিকেল তেলের সঙ্গে হলুদের গুঁড়া মিশিয়ে ত্বকে লালচেভাব, সংক্রমণ ও শুষ্কতা কমাতে ব্যবহার করা যায়। ত্বক পরিষ্কার করে মুছতে পাতলা ভেজা কাপড় ব্যবহার করলে ত্বককে বেশ প্রাণবন্ত মনে হবে।

হলুদের সঙ্গে লেবুর রস ও মধু: এই মিশ্রণ ত্বক ব্রণ মুক্ত রাখতে ও ত্বকের নির্জীবতা দূর করতে সাহায্য করে। হলুদের সঙ্গে লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে মুখ এবং গলায় ব্যবহার করুন। শুকিয়ে গেলে হালকা গরম পানি দিয়ে তা ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকে উজ্জ্বল ভাব বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্রণও দূর হবে।

হলুদ ও জলপাইয়ের তেল: হলুদে আছে নানা ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বক তরুণ ও সতেজ রাখতে সাহায্য করে। জলপাইয়ের তেল ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা রক্ষা করে। হলুদ ও জলপাইয়ের তেল মিশিয়ে তা মুখ ও গলায় লাগান। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে হালকা মালিশ করুন। এতে নতুন কোষ বৃদ্ধি পাবে। পানি দিয়ে ধুয়ে নমনীয় ত্বক অনুভব করতে পারবেন।

হলুদ দুধের উপকারিতা ও বানানোর নিয়ম (ভিডিও)

উপসংহার

হলুদ বা হলদে দুধের উপকারিতা বলে শেষ করা যাবেনা! প্রথম দিকে অল্প পরিমাণে খাওয়া শুর করতে হবে, আস্তে আস্তে পরিমাণ বাড়ানো যেতে পারে।

প্রাচীনকাল থেকেই হলুদমিশ্রিত দুধ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিশেষ করে ঋতু পরিবর্তনের সময় সর্দি-কাশি, ঠাণ্ডা লাগা, শারীরিক ব্যথাসহ বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে এক গ্লাস হলুদমিশ্রিত দুধ হতে পারে প্রাকৃতিক সমাধান। এছাড়া যেকোন ধরনের সংক্রমণ সারাতেও হলুদমিশ্রিত দুধ বেশ উপকারী।

তবে যাদের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা আছে, তাদের ডাক্তারের পরামর্শে ব্যবহার করাই উত্তম।

হলুদের উপকারিতা, শুধু মশলাই নয় এক বিস্ময়কর ঔষধি পণ্য !

ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, এক বিস্ময়কর খাদ্য উপাদান!

সুপারফুড চিয়া সিড পৃথিবীর সবচেয়ে পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাদ্য বীজ!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Show Buttons
Hide Buttons
Translate »