হলুদের উপকারিতা, শুধু মশলাই নয় এক বিস্ময়কর ঔষধি পণ্য !

প্রাচীন ভারতীয় আয়ুর্বেদ ও চৈনিক চিকিৎসাপদ্ধতিতে হলুদের ব্যবহার হচ্ছে সহস্র বছর ধরে! দক্ষিণ এশিয়ার রান্নায় হলুদ বহুল সমাদৃত একটি উপাদান। স্বাস্থ্যকর ভেষজ হলুদকে ‘ঔষধি ভেষজ’ নামেও আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে।

হলুদ কি ও  এর উৎস ?

হলুদ আদা পরিবারের(Zingiberaceae) অন্তর্গত একটি গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। এটির বৈজ্ঞানিক নামঃ (Curcuma longa)। হলুদ বা হলদি হলো হলুদ গাছের শিকড় থেকে প্রাপ্ত এক প্রকারের মসলা। ভারত, বাংলাদেশ এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের রান্নায় এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

হলুদ গাছের জন্য প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাতের দরকার হয়। এটি ২০ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যে জন্মে থাকে। হলুদ গাছের আদি উৎস দক্ষিণ এশিয়া।

হলুদ গাছের শিকড়কে কয়েক ঘণ্টা সিদ্ধ করা হয়, তার পর গরম চুলায় শুকানো হয়। এরপর এই শিকড়কে চূর্ণ করে গাঢ় হলুদ বর্ণের গুঁড়া পাওয়া যায়।

তবে ঐতিহ্যগতভাবে এই শিকড় ভালোভাবে ধৌতকরণের পর শিল- নোঁড়ায় জল সহযোগে বেটে নিয়ে হলুদের পেষ্ট তৈরি করা হয় যা সরাসরি রান্নায় ব্যবহার করা হয়।

হলুদের স্বাস্থ্য উপকারিতা

হলুদ হচ্ছে প্রাকৃতিক সব থেকে কার্যকর পুষ্টিকর পরিপূরক। অনেক উচ্চ মানের গবেষণায় দেখা যায় যে হলুদে আমাদের দেহ এবং মস্তিষ্কের জন্য অনেক প্রয়োজনীয় উপাদান রয়েছে । হলুদের কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হল।

হলুদ ভেষজ ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ঃ

হলুদ এমন একটি মসলা যা তরকারিতে মেশানোর ফলে তরকারি হলুদ বর্ণে রূপান্তরিত হয়। হলুদ হাজার বছর ধরে এশিয়া উপমহাদেশে ভেষজ ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা জানার চেষ্টা করছেন উপমহাদেশের মানুষজন হাজার বছর থেকে কেন হলুদ ভেষজ ওষুধ হিসেবে ব্যাবহার করে আসছেন এবং এতে কি কি উপাদান বিদ্যমান ।

হলুদের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ও মূল সক্রিয় উপাদান হচ্ছে কারকিউমিন।এর শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি প্রভাব রয়েছে এবং এটি খুব শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। কারকিউমিন চর্বিযুক্ত দ্রবণীয়ও তাই চর্বিযুক্ত খাবারের সাথে হলুদ গ্রহণ করা ভাল।

কারকিউমিন একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরিঃ

ব্যাকটেরিয়ার মত জীবাণু খুব সহজে আমাদের শরীরে প্রবেশ করতে পারে, যা আমাদের শরীরের অনেক ক্ষতির কারণ হতে পারে। কারকিউমিন এই সমস্ত ক্ষতিকারক জীবাণু থেকে আমাদের শরীরকে রক্ষা করতে বিশেষ সহায়তা করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ

হলুদ আমাদের শরীরকে শক্তিশালী জীবাণু এবং ভাইরাসের বিরুদ্ধে আরো ভালো লড়াই করতে সহায়তা করে। হলুদের মধ্যে প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ লবণ, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, লোহা প্রভৃতি নানা পদার্থ রয়েছে। তাই হলুদ খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

রক্তে সুগারের ভারসাম্য রক্ষা করেঃ

হলুদ রক্তে শর্করার ভারসাম্যতা রক্ষা করে এবং টাইপ টু ডায়াবেটিস ভুক্তভোগীদের জন্য এটি দুর্দান্ত ওষুধ হিসেবে কাজ করে। এটি রক্তে চিনির মাত্রা হ্রাস করে এবং ইনসুলিন প্রতিরোধের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে। হলুদ গ্রহণের বেশকিছু মাধ্যম হতে পারে। সবথেকে উপযোগী মাধ্যম হচ্ছে হলুদ-আদা-চা রেসিপি তবে হলুদের কার্যকরী উপাদান গুলো পেতে হলে অবশ্যই আপনাকে তাজা হলুদ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

শ্বাসক্রিয়াকে শক্তিশালী করেঃ

গবেষণায় দেখা গেছে, রক্তের প্রবাহ বাড়িয়ে তুলতে সক্ষম হলুদের কারকিউমিন। অ্যালার্জি, হাঁপানি, ব্রংকাইটিস বা কাশি, ঠান্ডা ও কফের সমস্যায় আয়ুর্বেদ চিকিৎসকেরা হলুদ সেবনের পরামর্শ দিতেন।

মস্তিষ্কের ক্ষয়জনিত সমস্যা রোধ করেঃ

হলুদে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান পার্কিনসনস, আলঝেইমার, টিস্যুর স্থবিরতার মতো অসুস্থতা রোধে সক্ষম। এটি আমাদের মস্তিষ্কে তথ্য আদান-প্রদানের পরিমাণ বাড়ায়। হতাশার পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে।

ক্যান্সার প্রতিরোধে হলুদঃ

কিছু গবেষণায় গবেষকরা দেখেছেন হলুদ বিশেষ কিছু ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধক। একটি ক্লিনিকাল পরীক্ষায়, ক্যান্সার সমস্যায় ভুগছেন এমন ভিন্ন ভিন্ন ২৫ জন রোগীদের কারকিউমিন দিয়ে চিকিৎসাকরা হয়েছিল । গবেষকরা পরামর্শ দিয়েছেন যে এটি প্রাক্টেনসাস সেলগুলি ক্যান্সারে পরিণত হওয়া বন্ধ করতে পারে। ২00৮ সালের অন্য একটি সমীক্ষায় পরামর্শ দেয়া হয়েছে যে কারকিউমিন এর পরিমান বাড়িয়ে অগ্ন্যাশয় ক্যান্সারের কোষের বিরুদ্ধে কাজে লাগানো যেতে পারে। তবে হলুদ ক্যান্সারের চিকিত্সা বা রোধ করতে পারে কিনা সে বিষয়ে আরও গবেষণার দাবী রাখে।

হজম শক্তি বৃদ্ধিতে হলুদঃ

হজম এবং গ্যাস সহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় সহায়তা করতে চীনে হলুদের ব্যাপক ব্যবহার হয়ে আসছে। এটি প্রমাণ করার জন্য কিছু বৈজ্ঞানিক যুক্তি উপস্থিত রয়েছে। ডাবল-ব্লাইন্ড, প্লাসেবো-নিয়ন্ত্রিত গবেষণায় দেখা গেছে যে বদহজমজনিত সমস্যায় হলুদ ফোলাভাব এবং গ্যাসের লক্ষণ হ্রাস করে।

হলুদ মেমোরি শার্প করেঃ

গবেষকরা এখনো বিষয়টি নিয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত নয় তবে কিছু প্রমাণ থেকে জানা যায় যে হলুদ আলজাইমার রোগের সাথে যুক্ত মস্তিষ্কের স্নায়ুর প্রভাব কমাতে সহায়তা করতে পারে। একই সমীক্ষায় আরও দেখা গেছে যে কারকিউমিন মস্তিষ্ককে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করতে পারে। যদিও এই বিষয়টি নিয়ে গবেষণা চলমান।

ভালো ঘুমাতে সহায়তা করেঃ

সাত থেকে আট ঘণ্টা ভালো ভাবে ঘুমানো শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ ঘুমের সমস্যা আপনার হরমোন থেকে শুরু করে ক্ষুধা পর্যন্ত সর্বস্তর ধ্বংস করে দিতে পারে । একটি প্রাণী ভিত্তিক গবেষণায় দেখা গেছে যে ঘুমের সমস্যায় ভোগেন এমন রোগীদের কে কারকিউমিন বিশেষভাবে সহায়তা করতে পারে।

হলুদ জয়েন্টের ব্যথা কমাতে পারেঃ

হলুদ প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত, তাই এটি আশ্চর্যের কিছু নয় যে এটি জয়েন্টের ব্যথা কমাতে সহায়ক। জার্নাল অফ অল্টারনেটিভ অ্যান্ড কমপ্লিমেন্টারি মেডিসিনে প্রকাশিত একটি গবেষণায় উঠে এসেছে অস্টিওআর্থারাইটিস তাদের ব্যথার জন্য কারকিউমিন বা আইবুপ্রোফেন গ্রহণ করে। গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন যে ব্যথা হ্রাস এবং উন্নত ফাংশন মোকাবেলার জন্য কারকিউমিন ড্রাগের সাথে তুলনীয়।

হলুদ এন্টিসেপটিক হিসাবে কাজ করেঃ

হলুদের স্বাস্থ্যগত সুবিধা সম্পর্কে একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে যে এটিতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি কাটা এবং পোড়া জীবাণুমুক্ত করার জন্য দরকারী ভূমিকা পালন করে। 200১-এর একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে এটি ক্ষতের নিরাময়ে গতি বাড়িয়ে দিতে পারে। সামান্য কাটা ছেড়ার জন্য পানির সাথে গুঁড়ো হলুদের পেস্ট তৈরি করে ক্ষতস্থানে লাগানোর মাধ্যমে ঘরে বসে এর প্রতিকার পাওয়া যায়।

ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেঃ

আপনি যদি প্রাকৃতিক ভাবে ত্বকের সুস্বাস্থ্য এবং উজ্জলতা চান হলুদ হতে পারে আপনার জন্য উত্তম একটি মাধ্যম। প্রাচীনকাল থেকে ভারতীয় উপমহাদেশে রূপচর্চায় হলুদ ব্যবহার হয়ে আসছে। হলুদে থাকা শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরির কারণে ত্বকের উজ্জ্বলতা পুনরুজ্জীবিত হয়। হলুদ ত্বকের বলিরেখা, বয়সের ছাপ দূর করে। মুখের তেলতেলে ভাব নিয়ন্ত্রণ করে। ব্রণের হাত থেকে ত্বককে বাঁচায়। খুশকি দূর করতেও সাহায্য করে।

ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ

গবেষণা বলছে, খাবারে নিয়মিত হলুদ গ্রহণ করলে ওজন কমে! আমাদের স্থূলতার জন্য দায়ী টিস্যুগুলোর বৃদ্ধি রোধ করে। মেটাবলিজম বাড়ায়। ফলে চিনিজাত খাদ্য শরীরে চর্বি আকারে জমাট বাঁধতে পারে না। হলুদ রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ সারিয়ে তোলে।

আর্থ্রাইটিসের ব্যথা হ্রাস করেঃ

হলুদে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান থাকে। আর্থ্রাইটিসের কবল থেকে এই উপাদান রক্ষা করে। হাড়ের কোষকে সুরক্ষা দেয়। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে নড়াচড়ার অসুবিধা দূর করে।

হৃদ্​যন্ত্রকে রক্ষা করেঃ

হলুদ রক্তকোষ ও কোলেস্টরেলবাহী তন্তুকে ঠিক রাখে। রক্তনালিকে উন্মুক্ত করে ও রক্ত চলাচলের বাধা দূর করে। রক্তকণিকার অনাকাঙিক্ষত মৃত্যু রোধ করে।

যকৃৎ সুরক্ষিত রাখেঃ

হলুদ যকৃতের নানান রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। লিভারের বহুবৃদ্ধি, হেপাটাইটিস, সিরোসিস, গলব্লাডারের মতো সমস্যা তৈরিতে বাধা দেয়।

মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করেঃ

স্পষ্টভাবে আশা করা যায় যে হলুদ ডিপ্রেশন ডিসর্ডার চিকিৎসা সহ মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করতে পারে। ২0১৪ সালের একটি গবেষণায় কারকিউমিন এর কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়েছে।  পৃথকভাবে কিছু ব্যক্তিদের ১000 মিলিগ্রাম কারকিউমিন এবং ২0 মিলিগ্রাম ফ্লুঅক্সেটিন দেয়া হয়েছিল। গবেষণা পাওয়া গিয়েছে ১000 মিলিগ্রাম কারকিউমিন দেয়া ব্যক্তিদের ডিপ্রেশন ডিসওর্ডার নিয়ন্ত্রণে কারকিউমিন বিশেষ ভূমিকা রাখছে। সুতারাং আশা করা যায় যে ভবিষ্যতে বড় ধরনের ডিপ্রেশন ব্যধিতে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য কারকিউমিন ব্যবহার করা যেতে পারে।

নিয়মিত পিরিয়ড নিশ্চিত করেঃ

অনিয়মিত মাসিক রোধ, হরমোনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ–বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে হলুদের কারকিউমিন। এই উপাদান পিরিয়ডের আগে ব্যথা কমাতেও সাহায্য করে থাকে।

গুড়া, কাঁচা হলুদ খাওয়ার নিয়ম

ভালো মানের হলুদের গুঁড়ো ১/৪ কাপ, গোলমরিচ গুঁড়ো আধা চা চামচ, বিশুদ্ধ পানি আধা কাপ- একটি পাত্রে সব উপকরন একসাথে মিশিয়ে মধ্যম আঁচে চুলায় দিয়ে ক্রমাগত নাড়তে হবে যতক্ষণ না একটি ঘন পেস্ট তৈরি হয়।

৭ মিনিটের মত রাখতে হবে। যদি এর মাঝে খুব বেশি শুকিয়ে যায় তাহলে সামান্য একটু যোগ করুন। তারপর সেটি চুলা থেকে নামিয়ে ঠাণ্ডা করে একটি এয়ার টাইট পাত্রে নিয়ে ফ্রিজে রেখে দিন।

এই পেস্টটি ২ সপ্তাহের মত রাখা যাবে। এই হলুদের পেস্ট পরিমাণ ও প্রয়োজনমাফিক বিভিন্ন উপকরণ ও খাদ্য দ্রবের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার ও গ্রহণ করা যেতে পারে।

গোল্ডেন মিল্ক বা হলদে/হলুদ দুধ তৈরির নিয়ম ও উপকারিতা

  • কাঠ বাদামের দুধ- ১ কাপ (এর পরিবর্তে নারকেলের দুধ, সয়ামিল্ক,গরুর দুধ বা যেকোনো দুধ দিতে পারেন)
  • রান্নার নারকেল তেল- ১ চা চামচ (এর পরিবর্তে কাঠ বাদামের বা তিলের তেল ব্যবহার করতে পারেন)
  • তৈরি করা হলুদের পেস্ট- ১/৪ চা চামচ বা একটু বেশি
  • মধু- স্বাদ অনুযায়ী

মধু ছাড়া সব উপকরন একসাথে মিশিয়ে একটি পাত্রে নিয়ে মধ্যম আঁচে চুলায় দিয়ে ক্রমাগত নাড়তে হবে এবং ভালো ভাবে গরম হলে নামিয়ে কিছুটা ঠাণ্ডা হতে দিন। কুসুম গরম অবস্থায় মধু মিশিয়ে পান করুন।

গোল্ডেন মিল্ক পানের নিয়ম – গোল্ডেন মিল্ক খেতে হবে খালি পেটে। সকালে ঘুম থেকে উঠে এবং রাতে ঘুমাতে খাওয়ার সময়। এভাবে নিয়মিত ৪০ দিন করে বছরে দুইবার খেলে শরীর থাকবে রোগমুক্ত এবং ত্বক সুন্দর ও উজ্জ্বল হবে।

হলুদ দুধের কারকিউমিন আমাদের কোষ, রক্ত এবং অঙ্গের স্বাস্থ্যকে উন্নত করে। আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দ্রুত এবং আরও কার্যকর হয়ে ওঠে এবং হলুদের প্রতিকারের বৈশিষ্ট্যগুলি আমাদের শরীরকে সংক্রমণ, আঘাত বা রোগের বিরুদ্ধে স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করে যা আমাদের দ্রুত নিরাময়ে সহায়তা করে।

হলুদের অপকারিতা

পৃথিবীতে যা কিছু আছে মোটামুটি সব কিছুরই ভালো – খারাপ দুই দিকই আছে। ব্যবহারের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। পরিমিত ব্যবহারে আপনি যেমন অনেক উপকার পাবেন তেমনি অতিরিক্ত ব্যবহারের কিছু কুফল রয়েছে,। চলুন জানা যাক অতিরিক্ত হলুদ ব্যবহারের অসুবিধা গুলি।

হলুদ সাধারনত গুরুতর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না অতিরিক্ত সেবনের ফলে কিছু লোকের পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরা, ডায়রিয়ার মতো হালকা পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া অনুভব হতে পারে।

হলুদ রক্তপাতজনিত অসুস্থতায় লোকেদের রক্তপাত এবং রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। ওয়ারফারিন(কাউমাদিন)এর মতো রক্ত ​​পাতলা ওষুধ গ্রহণকারী লোকদের বেশি পরিমাণে হলুদ সেবন করা এড়ানো উচিত।

পুরুষরা যখন সরাসরি মুখের সাহায্যে হলুদ গ্রহণ করেন তখন হলুদ টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমিয়ে শুক্রাণু চলাচলে হ্রাস পেতে পারে। এটি উর্বরতা হ্রাস করতে পারে। বাচ্চা নেয়ার চেষ্টা করছেন এমন লোকেরা খুব যত্ন সহকারে হলুদের ব্যবহার করতে হবে।

খুব বেশি পরিমাণে হলুদ সেবন করার ফলে কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে, কারণ এতে অক্সালেট রয়েছে এই অক্সালেটগুলি ক্যালসিয়ামের সাথে আবদ্ধ হয়ে ক্যালসিয়াম অক্সালেট তৈরি করতে পারে যা মূলত কিডনিতে পাথরের জন্য দায়ী।

লিভারে যাদের সমস্যা আছে বা লিভারের রোগ হওয়ার ঝুঁকি আছে তারা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী হলুদ খাবেন। বেশি হলুদ গ্রহণ তাদের জন্য ক্ষতিকর।

হলুদের নিরাপদ মাত্রা

বিশেষজ্ঞদের মতে, নির্যাস হিসেবে দিনে ৫০০ থেকে ২০০০ মি.লি. গ্রাম পর্যন্ত হলুদ খাওয়া নিরাপদ। কারণ হলুদের নির্যাসে ‘কারকিউমিন’য়ের মাত্রা কম হয়।

দুই থেকে আড়াই হাজার মি.লি. গ্রাম হলুদের গুঁড়া রান্নায় ব্যবহার করা হলে তা থেকে ‘কারকিউমিন’ মিলবে ৬০ থেকে ১০০ মি.লি. গ্রাম। এতটুকুতে কারও কোনো অসুবিধা হবে না।

তবে হলুদ ‘সাপ্লিমেন্ট’ হিসেবে গ্রহণ করতে চাইলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়াটা শ্রেও।

হলুদের বুস্টার (Turmeric Booster) কি, কেন এবং কিভাবে খাবেন?

উপসংহার

হলুদ মানব শরীরের জন্য অতীব প্রয়োজনীয় একটি খাদ্য উপাদান। পরিমিত ব্যবহারে হলুদের যেমন অনেক উপকারিতা রয়েছে তেমনি অতিরিক্ত ব্যবহারের কিছু কুফল ও বিদ্যমান।

পরিমাণ ও প্রয়োজন মাফিক হলুদের ব্যবহার আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে অধিকতর সুন্দর ও   সাবলীল করতে সহায়ক।   

ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, এক বিস্ময়কর খাদ্য উপাদান !

সুপারফুড চিয়া সিড পৃথিবীর সবচেয়ে পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাদ্য বীজ !

কোলেস্টেরলঃ গল্পচ্ছলে শরীর নিয়ে লেখা,নিছক কৌতুক নয় !

Related Post