বুলেটপ্রুফ কফি – অফুরন্ত শারীরিক ও মানসিক শক্তির উৎস! ইদানীং বিশ্বের বহু জায়গাতেই ক্রমাগত বারছে বুলেটপ্রুফ কফির জনপ্রিয়তা। বুলেট কফিতে, মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়ে ফলে মনসংযোগও বাড়ে।
শত বছরেরও আগে থেকে পূর্ব আফ্রিকার কিছু দেশে কফির সাথে শুধুমাত্র বাটার মিশিয়ে পান করা হয়, এটা বাটার কফি নামে পরিচিত। তবে বর্তমান সময়ে আমেরিকা, ইউরোপ, কানাডায় বুলেটপ্রুফ কফি খুবই জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
বহু আগের প্রচলিত বাটার কফির সাথে কোল্ড প্রেসড কোকনাট ওয়েল, MCT ওয়েল মিশিয়ে যে কফি পান করা হয় সেটাই বুলেটপ্রুফ কফি।
এই কফির মূল উপাদান চারটিঃ-১.অর্গানিক রোস্টেড কফি বিন, ২.অর্গানিক বাটার/ঘি, ৩. অর্গানিক কোল্ডড প্রেসড কোকোনাট ওয়েল, ৪. MCT ওয়েল। এছাড়াও স্বাদ ও উপকারিতা বাড়াতে কোকো পাউডার, ফ্ল্যাক্সসীড পাউডার, পিংক সল্ট ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।
বুলেটপ্রুফ কফি খাওয়ার উপকারিতা কি ?
- অর্গানিক কফিতে রয়েছে বিশেষ এন্টিঅক্সিডেন্ট যা শারীরিক ও মানসিক শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক। শরীর মন চাঙ্গা করার পাশাপাশি কাজে মনোযোগ বাড়ায়। শরীরের অতিরিক্ত চর্বি গলাতে সাহায্য করে।
- অর্গানিক ঘি বা বাটারে রয়েছে অনেক বেশি পরিমানে শক্তিশালী এন্টিঅক্সিডেন্ট যা হার্টের সুরক্ষায় উপকারী কোলেস্টেরল HDL বাড়ায় এবং ইনফ্লামেশন বা প্রদাহ কমায়।
- অর্গানিক কোল্ডড প্রেসড কোকোনাট ওয়েল ও MCT ওয়েল এগুলোকে বলা হয় ব্রেইনের মুল খাবার বা জ্বালানী। হার্টের সুরক্ষায়, ওজন কমাতে, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে এগুলো চমৎকার ভূমিকা রাখে।
- এই কফির মধ্যে ক্যাফেইন থাকে বলে, এটি দিনভর আপনাকে চাঙ্গা রাখে। এনার্জিতে ভরপুর থাকা যায়। যার ফলে ছুটোছুটি জাতীয় কাজ করতে সমস্যা হয় না দিনভর।
- বিশেষজ্ঞদের দাবি, এই কফিতে এমনসব উপকরণ রয়েছে যা মেদকে পুড়িয়ে দেয়। ফলে সহজে ওজন কমে। নারকোল তেল জাতীয় সহজপাচ্য ফ্যাটকে এই কফি ঝরিয়ে দিতে সক্ষম।
- অ্যাস্থমা, হৃদপেশী সংক্রান্ত রোগ কমাতে তথা ক্যান্সার নিরাময়েও এই কফি অত্যন্ত উপকারী। আর সেজন্যই বহু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এই কফি রেকমেন্ড করে থাকেন।
বুলেট কফি বানানোর রেসিপি, নিয়ম
যা যা লাগবেঃ
- কফি ২ চা চামচ (রোস্টেড কফি দানা গুড়া করে নিবেন)
- ঘরে বানানো বাটার ১০ গ্রাম অথবা খাটি ঘি ১ টেবিল চামচ
- নারিকেল তেল ২ চা চামচ (১০০% অরগানিক কোল্ড প্রেসড)
- MCT Oil ১ টেবিল চামচ
- আনসুইটেন্ড কোকো পাউডার ১/৪ চা চামচ (Optional)
প্রস্তুত প্রণালিঃ
- হাড়িতে ১ মগ পানি ফুটে উঠলে তাতে কফির গুড়া দিয়ে মাত্র ২ মিনিট মাঝারি তাপে কফিটা জ্বাল দিয়ে নিন।
- বেশিক্ষন জ্বাল দিবেন না এতে কফির সুগন্ধ উড়ে যেতে পারে।
- ব্লেন্ডারের জগে বাটার/ঘি, নারিকেল তেল, MCT Oil, কোকো পাউডার দিয়ে তাতে ফুটন্ত কফিটা ছেঁকে ঢেলে দিন।
- তারপর ব্লেন্ডারের সুইচ অন করে ১ মিনিট ব্লেন্ড করে নিন। অতঃপর যদি একটু বেশি ক্রিমি আর ফোমি কফি খেতে চান, তো আরও ৩০ সেকেন্ড অথবা ১ মিনিট ব্লেন্ড করে নিন।
- ব্যাস, এখন আপনার বহু আকাংক্ষিত বুলেটপ্রুফ কফি পান করতে পারেন।
বুলেট কফির অপকারিতা
- বুলেট কফি মেজাজের জন্য খারাপ।
- এর ক্যাফেইন শরীরের অ্যাড্রেনালিন নামক একধরনের হরমোনের মাত্রা বাড়ায়, যে কারণে শরীরের টানটান উত্তেজনা বা ঘাবড়িয়ে যাওয়ার অনুভূতির মাত্রা বেড়ে যায়।
- সন্তান ধারণে অক্ষমতা: দৈনিক পাঁচ কাপের বেশি কফি খেলে গর্ভধারণের ক্ষমতা কমে যেতে পারে।
বুলেট কফি খাওয়ার নিয়ম
বিশেষজ্ঞরা বলছেন সকালে উঠে চায়ের বদলে বুলেটপ্রুফ কফির পেয়ালা নিয়ে বসা উচিত। ব্রেকফাস্টের জায়গাতেও এই কফি পান করা যেতে পারে। তাতে অবশ্যই মেদ ঝরবে বলে দাবি, নির্মাতাদের।
খাবার খাওয়ার আগে খেলে কম খাবারে পেট ভরবে৷ ব্যায়াম করার আগে খেলে দ্বিগুণ এনার্জি নিয়ে ব্যায়াম করা যায়, ক্যালোরি ও ফ্যাট ঝড়ে বেশি৷ ব্যায়ামের পর খেলে চর্বি ঝরার হার আরও বাড়ে৷
খুব সহজে বানিয়ে ফেলুন বুলেটপ্রুফ কফি ও চা (ভিডিও)
উপসংহারঃ
ওজন, চলতি বিশ্বে এক বড় সমস্যার নাম। সবাই ওজন কমানোর ইঁদুর দৌড়ে লেগে রয়েছে। ওজন কমানোর এক জনপ্রিয় উপায় হল কিটো ডায়েট। আর এই কিটো ডায়েটের অন্যতম প্রধান উপাদান বুলেটপ্রুফ কফি।
বিশ্বের বহু জায়গাতেই ক্রমাগত বাড়ছে বুলেটপ্রুফ কফির চাহিদা। এই কফিতে, মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়ে, ফলে মনসংযোগ বাড়ে। খিদে পেলে তা পেট ভর্তি করে দেয় বলেও অনেকে মনে করেন। এর সঙ্গে রয়েছে ওজন কমানোর ক্ষমতাও।