আপনার মূল্যবান ক্রেডিট কার্ড যেভাবে সুরক্ষিত রাখবেন!
আধুনিক প্রযুক্তির এক অনন্য উপহার ডেভিড-ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক পেমেন্ট সুবিধা। এই ধরনের কার্ড সাথে থাকলে টাকা নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর ঝামেলা থেকে অনেকটাই নিস্তার পাওয়া সম্ভব। এক মুহূর্তের মধ্যে ইলেকট্রনিক পেমেন্টের মাধ্যমে বিল পরিশোধের সুবিধা লাভ করে থাকেন গ্রাহকরা।
কিন্তু প্রযুক্তির সুবিধার পাশাপাশি ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। ইলেকট্রনিক পেমেন্টও এর ব্যতিক্রম নয়। প্রযুক্তির ফাঁক-ফোঁকর কাজে লাগিয়ে এক ধরনের সাইবার অপরাধী সারাক্ষণ অনলাইনে অন্যের টাকা হাতানোর পাঁয়তারা করতে থাকে।
একটু অসতর্ক হলেই মুহূর্তের মধ্যে একাউন্ট ফাঁকা করে দিতে পারে ভয়ঙ্কর সাইবার অপরাধীরা। সাইবার অপরাধীরা সক্রিয়, তাই বলে কী মানুষ প্রযুক্তির এই সুবিধা থেকে নিজেদের বঞ্চিত রাখবে?
ক্রেডিট কার্ড পৃথিবীতে কবে থেকে চালু হয়?
আশির দশকে ক্রেডিট কার্ডের প্রচলন শুরু হয়। অল্প সময়ের মধ্যে পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশে তা দারুণ জনপ্রিয়তা লাভ করে। ২০১৬ সালের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০১৪ সালের তুলনায় ২০১৫ সালে ইলেকট্রনিক কার্ড ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৭.৩ শতাংশ বেড়েছে।
বিশ্বব্যাপী নতুন গ্রাহকের সংখ্যা বাড়ে ৩১ ট্রিলিয়ন। ঐ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউরোপের গড়ে ৮টি লেনদেনের মধ্যে সাতটি লেনদেনই হয় ইলেকট্রনিক পেমেন্টের মাধ্যমে। তবে সব থেকে আশঙ্কার কথা হলো, ঐ এক বছরে সারা বিশ্বের ২১ বিলিয়ন ডলার অর্থ জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে।
২০১০ সালে এই জালিয়াতির পরিমাণ ছিল ৮ বিলিয়ন ডলার। গবেষকদের আশঙ্কা, ২০২০ সালে এই অঙ্ক দাঁড়াবে ৩১ বিলিয়ন ডলারে।
যেভাবে সুরক্ষিত রাখবেন আপনার ক্রেডিট কার্ড!
সাইবার অপরাধীরা জালিয়াতি করতে নিত্যনতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকে। এর মধ্যে (সিএনপি) অর্থাত্ কার্ড নট প্রেজেন্ট জালিয়াতি অন্যতম। এই ধরনের জালিয়াতি মূলত অনলাইনের মাধ্যমে সংঘটিত হয়।
সাইবার অপরাধীরা দূষিত লিঙ্কের মাধ্যমে ‘ফিশিং’ ইমেইল পাঠিয়ে গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করে। পরবর্তীতে ঐ তথ্য কাজে লাগিয়ে অপরাধ সংঘটিত করে।
দ্বিতীয় আরেকটি পদ্ধতি হল কার্ড প্রেজেন্ট ফ্রড। এই পদ্ধতিতে গ্রাহকের কার্ড স্কিমিং করে গ্রাহকের অর্থ চুরি করে অপরাধীরা। অনেক সময় দেখা যায় দোকানের অসত্ বিক্রেতারা গ্রাহকের কার্ড সুইপ করার সময় ঐ ডিভাইসের মধ্যে গ্রাহকের তথ্য কপি করে রেখে দেয়।
এভাবেও জালিয়াতি হয়। আবার এমন ঘটনাও ঘটে যেখানে অসাধু বিক্রেতারা একবার বিল পরিশোধের ক্ষেত্রেও একাধিকবার বিল করে থাকে।
এ ধরনের জালিয়াতির হাত থেকে বাঁচতে নিজের পাসওয়ার্ড সুরক্ষিত রাখা জরুরি। কোন অবস্থাতেই পাসওয়ার্ড কোথাও লিখে রাখা উচিত নয়, কারো কাছেই বলা উচিত নয়। এছাড়া অনলাইন দুনিয়ায় বিচরণের ক্ষেত্রেও বেশ কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
নিরাপদ ব্রাউজিং :
কোনো একটি ওয়েবসাইটে ঢুকে পছন্দসই পণ্য দেখে দাম পরিশোধের জন্য ‘পে নাও’ বাটন দেখামাত্র সতর্ক হতে হবে। যখন যেখান থেকেই ইন্টারনেট ব্রাউজ করা হোক না কেন খেয়াল রাখতে হবে, সাইটের নামের শুরুতে যদি https:// না থেকে তবে তাত্ক্ষণিক ওই সাইট ত্যাগ করুন। https:// থাকা মানে ওই সাইটটি নিরাপদ, কিন্তু যদি কেবল http:// থাকে তবে ওই সাইট থেকে কিছু না কেনাই ভালো।
কঠিন পাসওয়ার্ড :
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় ব্যাংকের দেয়া পিন কঠিন বলে অনেকে তা ১২৩৪ সেট করে থাকেন, যা কিনা সহজেই অনুমান ও জালিয়াতিযোগ্য। তাই, সবচেয়ে ভালো হয় যদি কার্ডের সঙ্গে দেয়া পিনটি মুখস্ত করে কাগজটি পুড়িয়ে ফেলা যায় অথবা নিজে সেট করলেও একটু কঠিন দেখে একটি পিন সেট করতে হবে।
জালিয়াতরা কিন্তু ব্যাংকের লোক সেজেও গ্রাহকের কাছে কল দিয়ে প্রতারিত করতে পারে। তাই ব্যাংকের পরিচয় দিয়ে কেউ কখনো ফোন করে বা ইমেইল করে পিন নম্বরের মতো কোন গোপন তথ্য চাইলে কাউকে বলা যাবে না।
ওয়েব সিকিউরিটি টুল :
মোবাইল ফোন এবং কম্পিউটার উভয় মাধ্যমের জন্যই ওয়েব সিকিউরিটি টুল বা এই টুল সংযুক্ত আছে এমন অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করা যেতে পারে। এসব ক্ষেত্রে যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পেতে ওয়েব সিকিউরিটি টুল কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে।
কার্ড হারালে রিপোর্ট করা :
কোনভাবে কার্ড চুরি হলে বা হারিয়ে গেলে সাথে সাথেই ব্যাংকের কাস্টমার কেয়ারে ফোন করে কার্ডটি বন্ধ করার পদক্ষেপ নিতে হবে।
মনে রাখা দরকার, কার্ড জালিয়াতির থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সব চেয়ে বড় উপায় হচ্ছে সচেতনতা।