মুহাম্মদ ইউনুস হলেন একজন বাংলাদেশী সামাজিক উদ্যোক্তা,ব্যাংকার,অর্থনীতিবিদ,এবং সামাজিক নেতা যিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন গ্রামীন ব্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠা এবং মাইক্রোক্রেডিট এবং মাইক্রোফিনানসের ধারণার প্রবর্তক হবার জন্য। গ্রামীন ব্যাঙ্ক সেইসব উদ্যোক্তাদেরকে ঋণ দেয় যারা ব্যাঙ্ক ঋণ পাওয়ার জন্য যথেষ্ট পরিমান দরিদ্র।
২০০৬ সালে, ইউনুস এবং গ্রামীন ব্যাঙ্ককে মাইক্রোক্রেডিটের মাধ্যমে আর্থিক এবং সামাজিক উন্নয়নের স্বীকৃতিসরূপ একত্রে নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রদান করা হয়। আসুন এখন জানি তার মতে সাফল্যের সেরা ১০ টি সূত্র
১) খুব ছোট আকারে শুরু করুনঃ
বড় কিছু তৈরির কল্পনা করুন কিন্তু শুরু করুন খুব ছোট আকারে। যতটা ছোট আকারে সম্ভব হয় শুরু করুন, আপনার এই ছোট পদক্ষেপ বড় কিছুর দিকে আপনাকে ধাবিত করবে। সুতরাং ছোট ছোট পদক্ষেপে পরিবর্তনের পথে নিজেকে চালিত করুন। এটা করাটা কঠিন নয় খুবই সহজ।
২) প্রচলিত প্রথাকে চ্যালেঞ্জ করুনঃ
যদি কোন কিছু বুঝতে না পারেন তাহলে ভয় পেয়ে যাবেন না। এটা মনে করবেন না যে কিছু করার জন্য আপনাকে অনেক বুদ্ধিমান হতে হবে। আমাদের মতো বোকা মানুষরাও এমন কাজ করেছে যা কাজে দিয়েছে। এটাই সব থেকে মজার বিষয়। প্রচলিত প্রথাকে চ্যালেঞ্জ করতে ভয় পেয়েন না। প্রচলিত ব্যাঙ্কগুলো আমাকে সবসময় বলেছে দরিদ্র মানুষদেরকে ঋণ দেয়া সম্ভব নয়, কারণ তাদের ঋণ ফেরত দেয়ার ক্ষমতা নেই।
আমি এটা মিলিয়ন বারের চেয়েও বেশি শুনেছি। আমি ভাবলাম, এটা কি আসলেই ব্যাঙ্কগুলোর বলার কথা নাকি দরিদ্রদের বলার কথা যে আসলেই ব্যাঙ্কগুলো মানুষের জন্য কাজ করে কিনা। তাই আমি তারা যা করছে তার উল্টোটাই করলাম। সুতরাং বোকার মতো এবং উল্টা দিকে কাজ করা খারাপ বিষয় নয়।
৩) সবসময় টাকার কথা চিন্তা করবেন নাঃ
ব্যবসায় সাফল্য মাপা হয় কে কত টাকা বানাতে পারছে তার উপর। সেই কারণেই ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসার কারণে সৃষ্ট সামাজিক প্রভাব নিয়ে চিন্তা করেন না। ব্যবসায়ীদের চিন্তা সবসময়ই টাকা কেন্দ্রিক বা নিজেদের নিয়ে হওয়া উচিত না। মানুষ শুধুমাত্র টাকা বানানোর মেশিন বা রোবট না, আমরা যেমন নিজেদের এবং অন্যদের ভালো মন্দের খেয়াল রাখি তেমনই সারা পৃথিবীর ভালোর জন্যও কাজ করি। ব্যবসায়ীদেরও এই বিষয়টি খেয়াল রাখা উচিত।
৪) সার্টিফিকেটের জন্য অপেক্ষা করবেন নাঃ
আপনার উদ্যোক্তা হবার জন্য গ্রাজুয়েট বা মাস্টার্স ডিগ্রীর অর্জন করার জন্য অপেক্ষা করার কোন প্রয়োজন নেই। আপনি যে কোন সময়ই উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করতে পারেন। আপনি সার্টিফিকেটের জন্য তখনি অপেক্ষা করবেন যখন আপনি চাকরি প্রার্থী। উদ্যোক্তা হতে হলে আপনার সেই পরিমান শিক্ষাই প্রয়োজন যা দিয়ে আপনি আপনার পছন্দের পেশায় কাজ করতে পারবেন।
৫) চাকরিদাতার মতো আচরণ করুনঃ
কে আপনাকে বলেছে চাকরির কথা? আপনার শিক্ষক বলেছে না টেক্সট বইয়ে চাকরির কথা লেখা আছে? চাকরির কথা ভুলে যান। চাকরির চিন্তা পুরাতন আমলের ধ্যান ধারণা। এটা থেকে বের হয়ে আসুন। নিজেকে বার বার বলুন আমি চাকরি প্রার্থী নই, আমি চাকরি দাতা এবং সেই মোতাবেক চিন্তা আর আচরণ করুন।
আপনি দেখবেন আপনার কাজে অসাধারণ পরিবর্তন এসেছে এবং পরিবর্তনের সুচনা হয়েছে আপনার মাথা আর চিন্তা চেতনা থেকে। আমরা সবাই জন্ম থেকেই উদ্যোক্তা এবং সবার মধ্যে উদ্যোক্তা হবার মতো যোগ্যতাও আছে। এটা আমাদের ডিনএতে আছে এবং এই ক্ষমতা ব্যবহার করেই মানুষেরা এত বছর ধরে এই পৃথিবীতে বসবাস করছে।
আমরা যখন গুহাতে থাকতাম তখন আমরা এক গুহা থেকে আরেক গুহাতে চাকরি খুজতাম না। মানুষ জীবনধারণের জন্য উদ্যমী আর সমস্যা সমাধানকারী ছিল, মানুষ জন্ম নেয়নি অন্যের হয়ে কাজ করার জন্য ভুলক্রমে আমাদেরকে চাকরি প্রার্থী বানিয়ে দেয়া হয়েছে। যখনি আপনি চাকরি করা শুরু করেন তখনি আপনি আপনার বিশাল সৃজনশীল ক্ষমতাকে ছোট ছোট অংশে বিভক্ত করে অনেক কম বানিয়ে ফেললেন।
৬) আপনার অনুপ্রেরণা বের করুনঃ
আমার মা আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণাদায়ী মানুষ ছিলেন। এছাড়া আমাকে দারুনভাবে অনুপ্রানিত করে গ্রামীন ব্যাঙ্ক এর ঋণ গ্রহীতা মহিলারা, তাদের কঠিন জীবন এবং এই জীবনকে বদলে দেবার জন্য তাদের যে প্রয়াস যাতে তার ভবিষ্যত প্রজন্মকে তার মতো কষ্ট না করতে হয়।
৭) আপনার জীবনের উদ্দেশ্যকে পুনরায় আবিস্কার করুনঃ
জীবনের উদ্দেশ্য টাকা উপার্জন নয়, নিজের এবং অন্যের জন্য পরিপূর্ণ সুখ আর আনন্দের ব্যবস্থা করা। আজকের যুবকদের তাদের সৃষ্টিশীলতা দিয়ে এমন এক পৃথিবী তৈরী করা উচিত যেখানে কেউ বেকার,গরিব এবং রাষ্ট্রের ভাতার উপর নির্ভরশীল থাকবে না।
৮) আপনার কল্পনাশক্তিকে সীমাবদ্ধ করে ফেলবেন নাঃ
নিজের কল্পনাশক্তিকে মুক্ত পাখির মতো উড়তে দিন একে সীমাবদ্ধ করে ফেলবেন না। পৃথিবীকে বদলে দেবে এমন কিছু নিয়ে কল্পনা করুন সেটা যতোই অবাস্তব বা উদ্ভট রকমের হোক না কেন। নিজের মনে একটি সামাজিক কাহিনী তৈরী করুন যা কিনা আপনার সম্প্রদায় এবং পৃথিবীকে বদলে দেবে।
৯) নিজের উপর আত্মবিশ্বাস রাখুনঃ
গ্রামীন ব্যাঙ্ক এর ঋণ গ্রহীতা মহিলারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আগে কখনো ঋণ নেয়নি। ঋণ নেবার সময় আমি অনেক সময়ই তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের অভাব দেখতে পেতাম, কারণ তারা চিন্তা করতো তারা কখনো এই ঋণ পরিশোদ করতে পারবে কিনা। যখন তারা তাদের প্রথম ঋণের টাকা ফেরত দিতে সমর্থ হতো, আমি তাদের মধ্যে অপার আত্মবিশ্বাস দেখতে পেতাম। সফলতার জন্য আত্ম বিশ্বাস থাকাটা খুব জরুরী।
১০) পৃথিবীর উন্নয়নের জন্য কাজ করুনঃ
আমরা আজকে যেই পৃথিবী কল্পনায় দেখতে পাই সেই পৃথিবী তৈরির জন্য কাজ করা উচিত। আমি যেমন আমার কল্পনায় একটি দারিদ্রমুক্ত পৃথিবী দেখতে পাই যেখানে একটি মানুষও দরিদ্র নয়। যখন আমি সেটা করতে সমর্থ হবো তখন জায়গায় জায়গায় জাদুঘর তৈরী করা হবে, এবং যেখানে মানুষ তার ছেলে মেয়েকে নিয়ে দেখতে যাবে দারিদ্রতাকে।
আমি এমন একটি পৃথিবী কল্পনা করি যেখানে কাজ করার যোগ্য কেউ বেকার থাকবে না, এবং ছাত্ররা থিসিস লিখবে আগেকার দিনে দারিদ্রতা কেন ছিল তা নিয়ে। কেউ রাষ্ট্রের দেয়া ভাতার উপর নির্ভরশীল থাকবে না, কারণ সবাই যার যার যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ করবে।