নবী কারীম (সঃ) উনার হাতের আঙ্গুলের ইশারায় চাঁদ দ্বিখন্ডিত হয়েছিলো। যখন চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হয় তখন চাঁদ সম্পর্কে কারো তেমন কোনো বিশেষ ধারনা ছিলনা।
ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিলো এরূপ যে, তখনকার মক্কার কাফেররা হুজুরপাক (সঃ) এর নবুওয়াতকে অস্বীকার করে। তারা উনার কাছে নবুওয়াতের নিদর্শন দেখতে চায়। তখন নবী করীম (সঃ) উনার হাতের আঙ্গুলের ইশারায় চাঁদ কে দু’ টুকরো করে তাদের দেখিয়েছিলেন, কিন্তু তাও অনেক বড় বড় জাহেল ঈমান আনেনি।
এই বিষয়টি পবিত্র কুরআনুল কারীমেও উল্লেখ করা হয়েছে। কুরআন শরীফে ইরশাদ করা হয়েছে, কেয়ামত আসন্ন এবং চন্দ্র বিদীর্ণ হয়েছে। তারা যদি কোনো নিদর্শন দেখে তবে তা থেকে তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে, এটা তো চিরাচরিত যাদু বৈ কিছু নয় (সুরা কামার শরীফঃ আয়াত শরীফ ১-৩)।
চাঁদ দিখন্ডিত হওয়ার বিষয়টি সহীহ হাদীসেও রয়েছে। আল্লামা ইবনে কাসীর রহমতুল্লাহি আলাইহি এ সম্পর্কিত হাদীস শরীফকে মুতাওয়াতির বলেছেন (তাফসীরে ইবনে কাসীর ৪/২৭৬)।
নিম্নে কয়েকটি হাদীস শরীফ উদ্ধৃত করা হলঃ
০১) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রঃ) বলেন, আমরা মিনায় নবী কারীম (সঃ) এর সাথে ছিলাম। তিনি চন্দ্রকে দিখন্ডিত করলেন এবং এক খন্ড পাহাড়ের পশ্চাতে চলে গেল ও এক খন্ড পাহাড়ের উপরে রইল। তখন রাসুলে পাক (সঃ) বললেন, তোমরা সাক্ষী থেকো (সহীহ বুখারী শরীফ ১/৫৪৬; সহীহ মুসলিম শরীফ ২/৩৭৩)।
০২) হযরত আনাস ইবনে মালেক (রঃ) বর্ণনা করেন, মক্কা শরীফ বাসীরা রাসূলে পাক (সঃ)এর কাছে নবুওয়্যাতের কোনো নিদর্শন দেখতে চাইল। তখন রাসূলে পাক (সঃ) মহান আল্লাহ তায়ালার হুকুমে চন্দ্রকে দিখন্ডিত করে দেখিয়ে দিলেন। তারা (সাহাবায়ের কিরাম ও কাফেররা) দেখতে পেল যে, চাঁদের দুই খন্ড হেরা পাহাড়ের দুই পার্শ্বে চলে গিয়েছে।
সূত্রঃ সহীহ বুখারী শরীফ ১/৫৪৫; সহীহ মুসলিম শরীফ ২/৩৭৩; জামে তিরমিযী শরীফ ৩২৮৫; মুসনাদে আহমদ শরীফ ৩/১৬৫; দালাইলুন নুবুওয়াহ ২/২৬২-২৬৮; আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৩/৩৫৪, ৩৬১; ফাতহুল বারী ৭/২২১; আততাহরীর ওয়াত তানবীর ২৭/১৬৩; আদ্দুররুল মানসুর ৬/১৩২-১৩৪; তাফসীরে কুরতুবী ১৭/১২৫-১২৮; তাফসীরে মাযহারী ৯/১৩৫)।
এছাড়াও ভারতের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত মালাবার রাজ্যের (বর্তমান কেরালা অঞ্চল) তৎকালীন রাজা চক্রবর্তী ফারমাস (চেরামান পিরুমেল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) আকাশে চাঁদ দুই টুকরো হয়ে যাওয়ার ওই অলৌকিক ঘটনাটি স্বচক্ষে দেখেছিলেন। যখন তিনি জানতে পারেন যে, আরব দেশে শেষ নবীর আবির্ভাব ঘটেছে এবং রাসুলে পাক(সঃ)ই চাঁদ কে দ্বিখণ্ডিত করেছেন, তখন তিনি মক্কায় গিয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।
আবু জেহেল লানাতুল্লাহি আলাল কাজিবিনের নেতৃত্বে একদল মূর্তিপূজারী ও ইহুদি জানায় যে, নবী কারীম (সঃ) যে মহান আল্লাহ পাক এর প্রেরিত রসূল তা তারা মেনে নেবে, যদি তিনি চাঁদকে দ্বিখণ্ডিত করে দেখাতে পারেন। তখন রাসূলে পাক (সঃ) মহান আল্লাহ পাক এর কাছে মোনাজাত করে চাঁদের দিকে উনার পবিত্র আঙ্গুলের ইশারা করলে ওই অলৌকিক ঘটনাটি ঘটে।
ওই আরব মুশরিকরা এই মোজেজা অস্বীকার করে একে যাদু বলে অভিহিত করে। কিন্তু উপস্থিত ইহুদিরা চাঁদ দুই ভাগ হওয়ার ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে কারণ, ওই ইহুদিরা তাওরাতে এর ইঙ্গিত সম্পর্কে অবহিত ছিল।
ভারতের ইতিহাস গ্রন্থ ‘তারিখ-ই-ফেরেশতা’য় ওই ঘটনা উল্লেখিত হয়েছে। চেরামান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, উনার নামে ভারতের কেরালা রাজ্যে একটি মসজিদও রয়েছে।
ভারতীয় যে মহামান্য রাজা ওই ঘটনা দেখেছিলেন, তার লিখিত বিবরণের একটি প্রাচীন দলিল বর্তমানে লন্ডনে ভারতীয় দূতাবাসের লাইব্রেরিতেও সংরক্ষিত রয়েছে। ওই দলিলে ভারতীয় সেই মহামান্য রাজার ভ্রমণের বিস্তারিত বর্ণনা আছে। ওই মহামান্য রাজা ভারতে ফেরার পথে ইয়েমেনে মৃত্যু বরণ করেন।