Health

শীত কালে হার্ট অ্যাটাকের পরিমাণ বেড়ে যায় কেন?

শীতকালে হার্ট অ্যাটাক, কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট দুটোরই পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। শীতকালে বুকে ব্যথা কে অবহেলা করা যাবে না। শীতে শরীরের তাপ ধরে রাখার জন্য হার্ট এর বেশি কাজ করতে হয় এবং এজন্য হার্টের ওপর চাপ পড়ে বেশি।

অতিরিক্ত ঠাণ্ডা আবহাওয়া বা শীতের কারণে পুরো শরীরেই প্রভাব পড়ে। হৃদযন্ত্র বা হার্টের ওপর শীত প্রভাব ফেলতে পারে একটু বেশি। এ সময় বেড়ে যায় হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও।

ঠাণ্ডা আবহাওয়া, কুয়াশা, ধুলাবালি—সব কিছু মিলে শীতকালে হৃদযন্ত্রের রোগ-বালাই ও শ্বাসকষ্টের প্রকোপ কিছুটা বৃদ্ধি পায়। শীতকালে এমনিতেই রক্তের চাপ বাড়ে। দেহের তাপমাত্রা ৯৬ ডিগ্রির নিচে নেমে গেলে অনেক সময় হাইপোথার্মিয়া (অস্বাভাবিকভাবে তাপমাত্রা কমে যাওয়া) হয়।

এতেও হৃদযন্ত্রের ধমনিগুলো সংকুচিত হয়ে হৃদযন্ত্রের ওপরও চাপ বাড়ায়। তা ছাড়া অতিরিক্ত শীত মনকেও নাড়া দেয়, মানসিক সমস্যাও তৈরি করে। এসব কারণে বুকে ব্যথা হতে পারে।

 

হার্ট অ্যাটাক বা কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট এর ঝুঁকি যাদের বেশিঃ

  • আগে হার্ট অ্যাটাক হয়েছে এমন ব্যক্তি।
  • অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ ও অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের রোগী।
  • ধূমপায়ী।
  • যাঁরা বসে বসে কাজ করেন বেশি অথবা কায়িক পরিশ্রম করেন না।

 

হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণঃ

১০ শতাংশ হার্ট অ্যাটাক নীরবেই ঘটে যায়, যাকে সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক বলে। এর পরও কিছু কিছু লক্ষণ থাকে। যেমন—

  • অ্যাটাকের শুরুতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়, বুকে অস্বস্তি বা ব্যথা হয়। মনে হতে পারে, কেউ বুক চেপে ধরেছে। তবে বুকে ব্যথা হবেই—এমন নিশ্চয়তা নেই।
  • শরীরের অন্য কোথাও যেমন বাহু, পিঠ, ঘাড় বা চোয়ালেও ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
  • হালকা মাথা ঘোরা অনুভূত হওয়া।
  • কাশি, বমি বমি ভাব, প্রচুর ঘাম বের হতে পারে।
  • চোখে ঝাপসা দেখা, ঘর্মাক্ত হওয়া ইত্যাদি।

 

হার্ট অ্যাটাক হলেঃ

সাধারণত চার ভাগের এক ভাগ মানুষ কোনো ধরনের পূর্বাপর ব্যথার উপসর্গ ছাড়াই হৃদরোগে বা হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়। এই চিত্রটি সারা পৃথিবীতে একই রকম। সব রোগীর বুকে ব্যথা হয় না। তবে কারো হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে মনে হলে তাত্ক্ষণিক কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। যেমন—

  • আক্রান্তকে ঝিমিয়ে পড়তে দেবেন না; বরং তার সঙ্গে কথা বলতে থাকুন।
  • রোগীর মাথা ৩০-৪৫ ডিগ্রি উঁচু করে শুইয়ে রাখুন, যাতে তাঁর শ্বাস নিতে সুবিধা হয়।
  • ফার্মেসি থেকে অ্যাসপিরিন (Aspirin) ৩০০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট কিনে সরাসরি চিবিয়ে খাইয়ে দিন। এই অ্যাসপিরিন হার্ট অ্যাটাকজনিত মৃত্যু কমাতে পারে ৩০ শতাংশ। অন্যান্য অসুখ থাকলেও এটা সেবনে কোনো ক্ষতি নেই।
  • রোগীকে দ্রুত নিকটস্থ হৃদরোগ হাসপাতাল অথবা হৃদরোগের চিকিৎসা হয় এমন সেন্টারে নিন।

 

সতর্কতা ও করণীয়ঃ

  • চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করে ওষুধপত্রের মাত্রা ঠিক করে নিন ও নিয়মিত ওষুধ সেবন করুন।
  • শীতের সময় ঘরের বাইরে হাঁটাহাঁটি না করে ঘরের ভেতর হালকা ব্যায়াম করা ভালো। অ্যারোবিক এক্সারসাইজ ও উপকারী হতে পারে।
  • বয়স্কদের প্রত্যহ গোসল না করাই শ্রেয়। করলেও কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করা ভালো।
  • শরীর ও মনের চাপ কমাতে টেনশনমুক্ত থাকুন।
  • অতিরিক্ত ওজন হার্টের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। তাই বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী আদর্শ ওজন জেনে তা বজায় রাখুন।
  • সুষম ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের দিকে বিশেষ নজর দিন। হৃদযন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার নয়, বরং সহায়ক খাবারদাবার গ্রহণ করুন।
  • শীতে ঘাম না হওয়ায় শরীর থেকে বাড়তি পানি ও লবণ বের হতে পারে না। তাই প্রয়োজন অনুযায়ী পানি পান করুন। কম লবণ গ্রহণ করুন।
  • নিয়মিত রক্তচাপ মাপুন এবং রক্তচাপ বেশি মনে হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
  • ঠাণ্ডা আবহাওয়া বা শীত থেকে রক্ষা পেতে সব সময় পর্যাপ্ত গরম জামা-কাপড় পরিধান করুন। বিশেষ করে বয়স্ক ও হৃদরোগীদের মাথার টুপি, হাত-পায়ের মোজা সঙ্গে রাখা উচিত। রাতে শোবার ঘরটি যথাসম্ভব উষ্ণ রাখুন।
  • হৃদযন্ত্রের ওপর অন্য যেসব অসুখ প্রভাব ফেলে, সেসব রোগ বিশেষ করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Show Buttons
Hide Buttons
Translate »