মুসলিমরা রোজা রাখলে তাকে বলা হয় ‘সিয়াম’। খ্রিস্টানরা রোজা রাখলে তাকে বলা হয় ‘ফাস্টিং’। হিন্দু বা বৌদ্ধরা রোজা রাখলে তাকে বলা হয় ‘উপবাস’। বিপ্লবীরা রোজা রাখলে তাকে বলা হয় ‘অনশন’। আর, মডার্ন মেডিক্যাল সাইন্সে রোজা রাখাকে বলা হয় ‘অটোফেজি’।
মজার ব্যাপার পৃথিবীর সবধর্মেই কম-বেশী কিছু কমন কথাবার্তা আছে। যেমন কোনও ধর্ম বলে না, খারাপ কাজ করো, পাপ করো। সব ধর্মই ভালো কাজকে উৎসাহিত করেছে।
এরকমই একটা কমন টার্ম ‘রোযা’। যেটা কোরআন ১৪০০ বছর আগে বলে গেছে, সেটারই আজকের সাইন্টিফিক ব্যাখার নাম অটোফেজি।
২০১৬ সালে নোবেল কমিটি জাপানের ডাক্তার ‘ওশিনরি ওসুমি’-কে অটোফেজি আবিষ্কারের জন্যে পুরষ্কার দেয়, খুব বেশীদিন আগের কথা কিন্তু না ! এরপর থেকে আধুনিক মানুষেরা ব্যাপকভাবে রোজা রাখতে শুরু করে।
Autophagy কি?
Autophagy শব্দটি একটি গ্রিক শব্দ; Auto অর্থ নিজে নিজে, এবং Phagy অর্থ খাওয়া, সুতরাং অটোফেজি মানে নিজে নিজেকে খাওয়া।
মেডিক্যাল সাইন্স নিজের গোস্ত নিজেকে খেতে বলে না, শরীরের কোষগুলো বাহির থেকে কোনো খাবার না পেয়ে নিজেই যখন নিজের অসুস্থ কোষগুলো খেতে শুরু করে, তখন মেডিক্যাল সাইন্সের ভাষায় তাকে অটোফেজি বলা হয়।
আরেকটু সহজভাবে বলি – আমাদের ঘরে যেমন ডাস্টবিন থাকে, অথবা আমাদের কম্পিউটারে যেমন রিসাইকেল বিন থাকে, তেমনি আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষের মাঝেও একটি করে ডাস্টবিন আছে।
সারা বছর শরীরের কোষগুলো খুব ব্যস্ত থাকার কারণে, ডাস্টবিন পরিষ্কার করার সময় পায় না, ফলে কোষগুলোতে অনেক আবর্জনা ও ময়লা জমে যায়।
শরীরের কোষগুলো যদি নিয়মিত তাদের ডাস্টবিন পরিষ্কার করতে না পারে, তাহলে কোষগুলো একসময় নিষ্ক্রিয় হয়ে শরীরে বিভিন্ন প্রকারের রোগের উৎপন্ন করে। ক্যান্সার বা ডায়াবেটিসের মত অনেক বড় বড় রোগের শুরু হয় এখান থেকেই।
মানুষ যখন খালি পেটে থাকে, তখন শরীরের কোষগুলো অনেকটা বেকার হয়ে পড়ে। কিন্তু তারা তো আর আমাদের মত অলস হয়ে বসে থাকে না, তাই প্রতিটি কোষ তার ভিতরের আবর্জনা ও ময়লাগুলো পরিষ্কার করতে শুরু করে।
কোষগুলোর আমাদের মত আবর্জনা ফেলার জায়গা নেই বলে তারা নিজের আবর্জনা নিজেই খেয়ে ফেলে, মেডিক্যাল সাইন্সে এই পদ্ধতিকে বলা হয় অটোফেজি।
সুতরাং, মানুষ শারীরিক ভাবে সুস্থ-সুন্দর, সবল ও দীর্ঘায়ু জীবন লাভের জন্য এই পদ্ধতি বেছে নিচ্ছে।
পুরো পৃথিবীর আধুনিক মানুষেরা আজকে অটোফেজির এই থিওরির পিছে ছুটছে!