হার্টের অসুখে বাইপাস সার্জারি এড়াতে মেনে চলুন এ সব…….
শুধু যে কাটাছেঁড়ার ভয়েই মানুষ বাইপাস করতে চান না তা নয়, অনেকের বাইপাস সার্জারি–অ্যাঞ্জিওপ্লাস্ট করানোর মতো অর্থ নেই। তবে সার্জারি নিরাপদ নয় কেবলই কষ্ট কমায়, বিশেষজ্ঞরা বলছেন কিছু ন্যাচারাল পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে হার্টের অসুখ থেকে মুক্ত থাকা যায়।
ন্যাচারাল বাইপাস : হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, কোল্যাটারালরা একযোগে নেমে পড়লে ইসকিমিয়া জনিত বুকে ব্যথার প্রকোপ কমে, হার্ট অ্যাটাকের মাত্রা কম থাকে ও ক্ষতি কম হয়। চিকিৎসার জন্য বেশ খানিকটা অতিরিক্ত সময় হাতে পাওয়া যায়।
২০০৮ সালে ‘হার্ভার্ড হার্ট লেটার’-এ প্রকাশিত প্রবন্ধে বিজ্ঞানীরা জানালেন সপ্তাহে ৫–৭ দিন কম করে ২০–৩০ মিনিট ঘাম ঝরানো ব্যায়াম করলে, এমন ব্যায়াম যাতে হার্টকে তার সক্ষমতার সীমা অতিক্রম করতে হয়, তার জন্য এমন গতিতে হাঁটতে হয় যাতে ঠাণ্ডার মধ্যেও অল্প ঘাম হয় ও হাঁপিয়ে হলেও দু’চারটে কথা বলা যায়।
এই গতিবেগ ধরে রাখতে হয় কম করে ২০–৩০ মিনিট। তার পর আস্তে আস্তে কমাতে হয় গতি। যাঁরা সাঁতার কাটেন, সাইকেল চালান, ঘাম ঝরানো খেলাধুলা করেন বা নাচেন, তাঁরাও যদি ২০–৩০ মিনিট এভাবে হার্টরেট ধরে রাখতে পারেন, কাজ হয়।
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ কুনাল সরকার জানিয়েছেন, ‘হার্ট ভালো রাখতে নিয়ন্ত্রিত ব্যায়াম করা দরকার। কিন্তু শুধু ব্যায়ামেই সব হবে এমন নয়। মানুষের হার্টের গঠন ও কার্যপদ্ধতি এতই জটিল যে তার আচরণের ব্যখ্যা সবসময় পাওয়া যায় না। একজনের রোগ হয়তো ওষুধ, নিয়ম ও ব্যায়ামে বশে থাকে, সেই একই রোগে আর এক জনের অপারশেন লাগে।
আর কোল্যাটারালরা হাত–পায়ের রক্ত সংবাহনের ক্ষেত্রে যে রকম সক্রিয় ভূমিকা নেয়, হার্টে সব সময় তা হয় না। কাজেই খুব বুঝেশুনে পা ফেলা উচিত।
ব্যায়ামের বিকল্প – ইইসিপি : ইইসিপি হলো এমন এক কাটাছেঁড়াবিহীন ও ওষুধবিহীন পদ্ধতি যা মোটামুটি ৩৫টি সিটিংয়ের মধ্যে বুকব্যথা ও হার্ট ফেলিওরে আক্রান্ত রোগীর সমস্যার সুরাহা করে। রক্তচাপ মাপার সময় যেমন পট্টি দিয়ে হাতের উপরের অংশ কষে বাধা হয়, এখানে তেমন পট্টি বাধা হয় পায়ের ডিমের কাছে, হাঁটুর ওপরের অংশে ও থাইয়ে।
হৃদস্পন্দন চলাকালীন হার্ট যখন রিল্যাক্সড হয় পট্টিগুলি একে একে দ্রুত ফুলে ওঠে। এই চাপ ওপর দিকে গিয়ে কোল্যাটারাল ধমনীগুলির মুখে রক্তচাপ বাড়ায়। সেই চাপে ধমনীগুলির মধ্যে একটু একটু করে রক্ত যেতে শুরু করে। ফলে মূল ধমনী বন্ধ থাকা সত্ত্বেও হার্টের পেশীতে শুরু হয় রক্ত সঞ্চালন।
ক্রনিক স্টেবল অ্যানজাইমা থাকলে এই পদ্ধতিতে ভালো কাজ হয়। মোটামুটি বছর পাঁচেক তাঁরা ভালো থাকতে পারেন। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, একে বাইপাস বা অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টির বিকল্প বলা যায় না। শারীরিক কারণে অপারেশন না করা গেলে সাময়িকভাবে কষ্ট কমানোর জন্য ইইসিপি করা যেতে পারে।
লেজার সার্জারি : সার্জিকাল কোল্যাটারালাইসেশন আশির দশকের শেষ থেকে নব্বইয়ের গোড়ার দিক পর্যন্ত টিএমআর বা ট্রান্স মায়োকার্ডিয়াল লেজার রিভ্যাসকুলারাইজেশনে রমরমা বাজার ছিল। শারীরিক কারণে যাঁরা বাইপাস বা স্টেন্টিং করতে পারতেন না, তাঁদের হার্টের পেশীতে হলমিয়াম লেজার দিয়ে ছোট ছোট ফুটো করে দেয়া হতো, যাতে স্পঞ্জের মতো কিছু রক্ত শুষে নিয়ে সে তার কাজ চালাতে পারে।
প্রথম দিকে বেশ ভালোই কাজ হচ্ছিলো। উপসর্গ কম থাকছিল। ব্যথার প্রকোপ থেকে মুক্তি পাচ্ছিলেন রোগীরা। কিন্তু কিছু দিন চলার পরই দেখা গেলো, এতে স্রেফ কষ্টই কমছে, রোগের উন্নতি হচ্ছে না বিশেষ। এমনকি পদ্ধতিটি করার জন্য মানুষ বেশিদিন বেঁচেছেন, এমন নজিরও পাওয়া যায়নি।
বায়োকেমিক্যাল অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি : এর আর এক নাম চিলেশন থেরাপি। ইডিটিএ নামে এক রাসায়নিকের সঙ্গে ধমনীতে জমা চর্বির ডেলার চিলেশন তথা রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটিয়ে তাকে গলিয়ে প্রথমে রক্তে, তার পর প্রস্রাবের মাধ্যমে বার করে আনাই হলো প্রধান উদ্দেশ্য। ধমনীতে ওষুধটি প্রবেশ করিয়ে দেয়ার পর শুধু সময়ের অপেক্ষা।
কিন্তু সত্যিই কি তাই? তা হলে ‘আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন’ ও ‘আমেরিকান কলেজ অব কার্ডিওলজি’ তাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না কেন? কেন ‘এফডিএ’ তাকে ছাড়পত্র দিচ্ছে না। এতে রক্তের ক্যালসিয়াম লেভেল বিপদসীমার নিচে নেমে যায়, ফলে কিডনি নষ্ট হয়ে যায় আর মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে। হার্টের চিকিৎসায় একে বহাল করতে গেলে এ রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে বলে জানালেন কুনালবাবু।
অর্থাৎ বাইপাসকে বাইপাস করতে গেলে রোগ হওয়ার অপেক্ষায় বসে থাকলে হবে না। সাবধান হতে হবে আগে থেকে। যে যে কারণে ইসকিমিক হার্ট ডিজিজ হতে পারে, তাদের সামলে চলার চেষ্টা করতে হবে। বশে রাখতে হবে ওজন, রক্তচাপ, সুগার, কোলেস্টেরল ও ধূমপান।
ত্যাগ করতে হবে অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট ও তেল–ঘি খাওয়ার অভ্যাস। রিফাইন্ড তেল হলে তো বিশেষ করে! এর সঙ্গে নিয়মিত কিছু ব্যায়াম করতে হবে। কার্ডিও, স্ট্রেন্থ ট্রেনিং ও যোগা মিলে দিনে ৪৫ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা। সপ্তাহে অন্তত ৫ দিন। চলতে হবে ডাক্তারের পরামর্শ মতো।